আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ‘ডন’ চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে রাজধানীর গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও অর্থপাচারের ৩টি মামলা করা হয়েছে। শনিবার বিকালে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নিকেতনে ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবনে শামীমের কার্যালয় ঘিরে অভিযান চালায় র্যাব। কার্যালয়ের ভেতর থেকে ডলার, মদ, আগ্নেয়াস্ত্র, নগদ টাকা, এফডিআর চেক উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় তার দেহরক্ষী সাতজনকে।
র্যাব জানায়, শামীমের কার্যালয় থেকে নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর চেক পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর তার মায়ের নামে, বাকিগুলো তার নামে। এছাড়া ৯ হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে।
অভিযানের র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সরোয়ার বিন কাশেম বলেন, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে শামীমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় এসেছে। এ ছাড়া তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা পাওয়া গেছে।
র্যাব জানায়, শামীমের দেহরক্ষীদের কাছ থেকে সাতটি শটগান জব্দ করা হয়। বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন জি কে শামীম। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বি কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের বাইরে অন্য কারও কাজ পাওয়া দুরূহ। সরকারি বড় কাজগুলো তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। শামীম রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত।
শনিবার গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিস) আব্দুল আহাদ জানান, গুলশান থানায় জি কে শামীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানিলন্ডারিংয়ে তিন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। সন্মানদী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল পাস করার পর তাঁদের গ্রামে দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বড় হয়েছেন।তিনি সবসময় ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী প্রটেকশন নিয়ে চলেন। সবার হাতেই থাকে শর্টগান। গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাক। তাদের একেকজনের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। শামীম ছোটখাটো মানুষ হলেও তার ক্ষমতার দাপট আকাশসমান।
রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় শামীম ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন। শুধু তাই নয় গণপূর্ত ভবনের বেশি ভাগ ঠিকাদারি কাজ তিনি করেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে এই শামীমই ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি। সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আবু জাফরের চাচাতো ভাই তিনি।